মঙ্গলবার অনিশ্চয়তার সাথে প্রি-মার্কেটে ট্রেডিং শুরু হয়েছে—যা ওয়াল স্ট্রিটে স্থিতিশীল পরিস্থিতির পূর্বে নয়, বরং অস্থিতিশীলতার পূর্বাভাস দিচ্ছে। সোমবার S&P 500 ফিউচারস-এর ইতিবাচক সেশনের পর সূচকটি 5,420 এর দিকে নেমে যাচ্ছে, যেখানে আবারও টেক জায়ান্টগুলো দরপতনের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে।
নাসডাক 100 সূচক 18,890 লেভেলের কাছে স্থিতিশীল রয়েছে, যেখানে একদিকে শুল্ক প্রত্যাহারের আশাবাদ এবং অন্যদিকে বর্ধিত বাণিজ্য উত্তেজনার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের দ্বিধায় ফেলেছে। এটি এক ধরনের ফাঁদ—স্বল্পমেয়াদে আনন্দের কারণ থাকলেও এটি এমন একটি মৌলিক ঝুঁকি যা এড়ানো যায় না।
আপাতদৃষ্টিতে ট্রেডাররা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে বলে মনে হতে পারে: স্মার্টফোন ও চিপে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, গাড়ির উপর শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্প ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, এবং প্রি-মার্কেট প্রধান স্টক সূচকসমূহে 0.4% বৃদ্ধি ঘটেছে। তবে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা শুধু বাহ্যিক পরিস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হন না।
এই শুল্ক শিথিলকরণ কেবল একটি অস্থায়ী বিরতি, কৌশলগত কোনো পরিবর্তন নয়। হোয়াইট হাউজ আবারও সেই পুরনো খেলায় নেমেছে—এক খাতে স্বস্তি দিলেও, অন্য খাত যেমন সেমিকন্ডাক্টর ও ফার্মাসিউটিক্যালকে জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের আওতায় আনার হুমকি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, যেকোনো মুহূর্তে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আয়ের প্রতিবেদন প্রকাশের মৌসুম, যা এখন প্রত্যাশা থেকে বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে। জনসন অ্যান্ড জনসন, ব্যাংক অফ আমেরিকা, সিটিগ্রুপ এবং পিএনসি ফিন্যান্সিয়াল কেবল বড় কোম্পানিই নয়—এগুলো ভোক্তাদের আচরণ, ঋণ পরিস্থিতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নির্ধারণের সূচক। প্রাথমিকভাবে এই কোম্পানিগুলোর আয়ের প্রতিবেদনই মার্কেটের মুভমেন্ট নির্ধারণ করবে। আয়ের প্রতিবেদনের ব্যাপারে প্রত্যাশা বেশ উচ্চ, কিন্তু হতাশাজনক ফলাফল মার্কেটে বড় ধরনের দরপতন ঘটাতে পারে।
S&P 500 এখন 5,420 লেভেলের কাছাকাছি ট্রেড করছে, যা ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে গঠিত বিস্তৃত অ্যাসেন্ডিং চ্যানেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স। RSI-এ (দৈনিক চার্টে 70 এর উপরে) সূচকটি ওভারবট জোনের কাছাকাছি রয়েছে, এবং ডাইভারজেন্স তৈরি হচ্ছে—সূচকটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছালেও, অসিলেটরগুলো তা অনুসরণ করছে না।
এটি এখনো পূর্ণাঙ্গ রিভার্সাল নয়, তবে এটি একটি সতর্ক সংকেত। তাৎক্ষণিক সাপোর্ট 5,350 থেকে 5,320 জোনে অবস্থিত। এই জোন ব্রেক করে সূচকটির দর নিচের দিকে গেলে সেটি 5,250 এর দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত করবে, যা মাঝারি-মেয়াদের প্রবণতার নিচের সীমানা।
নাসডাক 100 সূচকের দিক থেকে আরও কিছুটা আগ্রাসী মোমেন্টাম দেখা যাচ্ছে। 18,890 লেভেলটি বর্তমান কনসোলিডেশনের সর্বোচ্চ লেভেল। যদি এটি 18,900 এর ওপরে ব্রেক করে উপরের দিকে যায়, তাহলে 19,200-এর দিকে মোমেন্টাম শুরু হতে পারে।
তবে টেকনিক্যাল প্যাটার্ন এখনো কারেকশনের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে: ভলিউম কমছে, ক্যান্ডেলস্টিকের গঠন দুর্বল হচ্ছে, এবং দৈনিক চার্টে MACD সিগন্যাল লাইনের নিচের দিকে ক্রস করার কাছাকাছি রয়েছে। সাপোর্ট 18,550 এবং 18,200 লেভেলে রয়েছে। প্রথম লেভেলটি ব্রেক করা হলে অনেক টেক পজিশনে প্রফিট-টেকিং শুরু হতে পারে।
বুলিশ প্রবণতা বিরাজ করছে, তবে তা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। মৌলিক ভিত্তি থেকে যদি এই আশাবাদ দূরে সরে যায়, তাহলে প্রযুক্তিগত কারণগুলো মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করবে। যারা শীর্ষে প্রফিট বুক করতে ব্যর্থ হবে, তারা শেষ ট্রেনের শেষ যাত্রী হয়ে থাকতে পারে।
ব্যাংক অব আমেরিকা এবং সিটিগ্রুপ: স্থিতিশীলতা ও উদ্বেগের মাঝে ভারসাম্য
ব্যাংক অব আমেরিকা এবং সিটিগ্রুপ এমন দুই ব্যাংক, যাদের আয়ের প্রতিবেদন সবসময়ই সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এরা ঋণ কার্যক্রম, ভোক্তা আস্থা এবং সুদের হারের পরিবর্তনের পরিবেশে মার্জিনের সূচক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে, যখন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার-বৃদ্ধি চক্র থামিয়ে রেখেছে এবং মার্কেটের ট্রেডাররা গ্রীষ্ম নাগাদ সম্ভাব্যভাবে সুদের হার হ্রাসের আশা করছে, তখন ব্যাংকগুলোর মুনাফার সম্ভাবনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ব্যাংক অব আমেরিকা
ব্যাংক অব আমেরিকা শক্তিশালী রিটেইল ক্লায়েন্ট বেস এবং বিস্তৃত ডিপোজিট নেটওয়ার্কের কারণে সাধারণত উচ্চ সুদের হার বিরাজ করার সময় লাভবান হয়। তবে এই ত্রৈমাসিকে নেট ইন্টারেস্ট মার্জিন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শক্তিশালী শ্রমবাজার ও ভোক্তা ব্যয়ের বৃদ্ধি আয়কে সমর্থন দিচ্ছে, তবে মর্টগেজ ও গাড়ি ক্রয়ের জন্য ঋণ গ্রহণের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মার্জিনে চাপ দৃশ্যমান হবে।
প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে, ব্যাংক অব আমেরিকার শেয়ার $37 এর কাছাকাছি ট্রেড করছে, যেখানে $38.50 একটি গুরুত্বপূর্ণ রেজিস্ট্যান্স। যদি আয়ের প্রতিবেদনের ফলাফল ইতিবাচক হয় এবং মুনাফা স্থিতিশীল থাকে, তবে শেয়ারের মূল্য সহজেই $39 ব্রেক করে $41–42 জোনের দিকে যেতে পারে, যা 2023 সালের সর্বোচ্চ স্তর।
যদি ফলাফল হতাশাজনক হয়, তাহলে $35.70 পর্যন্ত দরপতন ঘটতে পারে এবং সম্ভবত $34.30 এর সাপোর্ট টেস্ট করতে পারে, যা বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেভেল।
নিরপেক্ষ বা সামান্য ইতিবাচক ফলাফলে মাঝারি ধরনের বৃদ্ধি আশা করা যায়। তবে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয়, তাহলে স্বল্পমেয়াদে 3–5% পর্যন্ত দরপতন ঘটতে পারে।
সিটিগ্রুপ
সিটিগ্রুপও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক অব আমেরিকার বিপরীতে, সিটিগ্রুপ আরও বেশি বৈশ্বিক এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রবাহ ও মার্কেটের অস্থিরতার প্রতি সংবেদনশীল। এই প্রতিবেদনের মূল আকর্ষণ হবে ইউরোপ ও এশিয়ার মার্কেটে অস্থিরতার মাঝে ইনস্টিটিউশনাল ও কর্পোরেট ব্যাংকিং বিভাগের পারফরম্যান্স।
বিনিয়োগকারীরা সিটিগ্রুপের পুনর্গঠন প্রচেষ্টার দিকেও নজর রাখছেন, যার মধ্যে রয়েছে ব্যবসা বিক্রি এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে মনোযোগ। এখানে কোনো ইতিবাচক সংকেত একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে সিটিগ্রুপের শেয়ারের দর $60 এবং $63 এর মাঝখানে আটকে আছে। শক্তিশালী আয় এবং পরিচালন দক্ষতার উন্নতির ইঙ্গিত পাওয়া গেলে শেয়ারটির মূল্য $65 ছাড়িয়ে $68 লক্ষ্যমাত্রার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
যদি প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক খাতে দুর্বলতা বা ফি আয়ের হ্রাস ধরা পড়ে, তাহলে শেয়ারটির দর $58-এ নেমে যেতে পারে, যার পরেই $55-এ একটি সাপোর্ট লেভেল টেস্ট করা হতে পারে।
বিশদ বিবরণে উচ্চ সংবেদনশীলতা রয়েছে। ইতিবাচক সংবাদের ক্ষেত্রে শেয়ারের মূল্য 5–6% লাফ দিতে পারে। যদি ফলাফল হতাশাজনক হয়, বিশেষ করে যদি পুনর্গঠনের অগ্রগতি দুর্বল হয়, তাহলে হঠাৎ করে 6–8% দরপতনের সম্ভাবনা রয়েছে।